Khirer Putul
(ক্ষীরের
পুতুল)
ক্ষীরের
পুতুল
এক রাজার দুই
রানী দুও আর
সুও। রাজবাড়িতে
সুওরানীর বড়
আদর, বড় যত্ন।
সুওরানী সাতমহল
বাড়িতে থাকেন।
সাতশো দাসী
তাঁর সেবা
করে,পা ধোয়ায়,
আলতা পরায়,
চুল বাঁধে।
সাত মালঞ্চের
সাত সাজি ফুল,
সেই ফুলে সুওরানী
মালা গাঁথেন।
সাত সিন্দুকে-ভরা
সাত-রাজার-ধন
মানিকের গহনা,
সেই গহনা অঙ্গে
পরেন। সুওরানী
রাজার প্রাণ!
আর দুওরানী--
বড়োরাণী, তাঁর
বড়ো অনাদর,
অযত্ন। রাজা
বিষ নয়নে দেখেন।
একখানি ঘর
দিয়েছেন-- ভাঙাচোরা।এক
দাসী দিয়েছেন--
বোবা-কালা।
পরতে দিয়েছেন
জীর্ণ শাড়ি,
শুতে দিয়েছেন
ছেঁড়া কাঁথা।
দুওরানীর ঘরে
রাজা একটি
দিন আসেন একবার
বসেন, একটি
কথা কয়ে উঠে
যান।
সুওরানী—ছোটোরানী,
তাঁরই ঘরে
রাজা বারোমাস
থাকেন।
একদিন রাজা
রাজমন্ত্রীকে
ডেকে বললেন--মন্ত্রী,
দেশ-বিদেশ
বেড়াতে যাব,
তুমি জাহাজ
সাজাও। রাজার
আজ্ঞায় রাজমন্ত্রী
জাহাজ সাজাতে
গেলেন। সাতখানা
জাহাজ সাজাতে
সাত মাস হয়ে
গেল। ছ’খানা
জাহাজে রাজার
চাকর-বাকর
যাবে, আর সোনার
চাঁদোয়া-ঢাকা
সোনার জাহাজে
রাজা নিজে
যাবেন।
মন্ত্রী এসে
খবর দিলেন—মহারাজ
জাহাজ প্রস্তুত।
রাজা বললেন—
কাল যাব।
মন্ত্রী ঘরে
গেলেন।
ছোটো রানী
— সুওরানী
রাজ-অন্তঃপুরে
সোনার পালঙ্কে
শুয়েছিলেন,
সাত সখী সেবা
করছিল, রাজা
সেখানে গেলেন।
সোনার পালঙ্কে
মাথার শিয়রে
বসে আদরের
ছোটোরানীকে
বললেন—রানী,
দেশ-বিদেশ
বেড়াতে যাব,
তোমার জন্য
কী আনব?
রানী ননীর
হাতে হীরের
চুড়ি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে
বললেন,—হীরের
রঙ বড়ো শাদা,
হাত যেন শুধু
দেখায়। রক্তের
মতো রাঙা আট-আট
গাছা মানিকের
চুড়ি পাই তো
পরি।
রাজা বললেন—আচ্ছা
রানী, মানিকের
দেশ খেকে মানিকের
চুড়ি আনব।
রানী রাঙা-পা
নাচিয়ে-নাচিয়ে,
পায়ের নূপুর
বাজিয়ে-বাজিয়ে
বললেন—এ নূপুর
ভালো বাজে
না। আগুনের
বরন নিরেট
সোনার দশ গাছা
মল পাই তো পরি।
রাজা বললেন—সোনার
দেশ থেকে তোমার
পায়ের সোনার
মল আনব। রানী
গলার গজমতি
হার দেখিয়ে
বললেন—দেখ
রাজা, এ মুক্তো
বড়ো ছোটো,
শুনেছি কোন
দেশে পায়রার
ডিমের মতো
মুক্ত আছে,
তারি এক ছড়া
হার এনো। রাজা
বললেন—সাগরের
মাঝে মুক্তোর
রাজ্য, সেখান
থেকে গলার
হার আনব। আর
কী আনব রানী?
তখন আদরিনী
সুওরানী সোনার
অঙ্গে সোনার
আঁচল টেনে
বললেন— মা
গো, শাড়ি নয়
তো বোঝা!
আকাশের মতো
নীল, বাতাসের
মতো ফুরফুরে,
জলের মতো চিকন
শাড়ি পাই তো
পরে বাঁচি।
রাজা বললেন—আহা,
আহা, তাই তো
রানী, সোনার
আঁচলে সোনার
অঙ্গে ছড় লেগেছে,
ননীর দেহে
ব্যথা বেজেছে।
রানী হাসি
মুখে বিদায়
দাও, আকাশের
মত নীল, বাতাসের
মত ফুরফুরে,
জলের মত চিকন
শাড়ি আনিগে।
ছোট রানী হাসি
মুখে রাজাকে
বিদায় করলেন।
রাজা বিদায়
হয়ে জাহাজে
চড়বেন— মনে
পড়ল দুঃখিনী
বড়োরানীকে।
দুওরানী—বড়োরাণী
ভাঙা ঘরে ছেঁড়া
কাঁথায় শুয়ে
কাঁদছেন, রাজা
সেখানে এলেন।
ভাঙা ঘরের
ভাঙা দুয়ারে
দাড়িয়ে বললেন-
বড়োরাণী, আমি
বিদেশ যাব।
ছোটোরানীর
জন্য হাতের
বালা, গলার
মালা, পায়ের
মল, পরনের শাড়ি
আনব। তোমার
জন্যে কী আনব?
বলে দাও যদি
কিছু সাধ থাকে।
রানী বললেন—মহারাজ,
ভালোয় ভালোয়
তুমি ঘরে এলেই
আমার সকল সাধ
পূর্ণ হয়।
তুমি যখন আমার
ছিলে তখন আমার
সোহাগও অনেক
ছিল, সাধও অনেক
ছিল। সোনার
শাড়ি অঙ্গে
পড়ে সাতমহল
বাড়িতে হাজার
হাজার আলো
জ্বালিয়ে সাতশো
সখীর মাঝে
রানী হয়ে বসবার
সাধ ছিল, সোনার
পিঞ্জরে শুক-শারীর
পায়ে সোনার
নূপুর পড়িয়ে
দেবার সাধ
ছিল। মহারাজ,
অনেক সাধ ছিল।
অনেক সাধ মিটেছে।
এখন আর সোনার
গহনায়, সোনার
শাড়িতে কি
কাজ? মহারাজ,
আমি কার সোহাগে
হীরের বালা
হাতে পরব? মোতির
মালা গলায়
দেব? মানিকের
সিঁথি মাথায়
বাঁধব? মহারাজ,
সেদিন কি আর
আছে! তুমি সোনার
গহনা দেবে,
সে সোহাগ তো
ফিরে দেবে
না! আমার সে
সাতশো দাসী
সাতমহল বাড়ি
তো ফিরে দেবে
না! বনের পাখি
এনে দেবে, কিন্তু
মহারাজ, শোনার
খাঁচা তো দেবে
না! ভাঙা ঘরে
সোনার গহনা
চোর-ডাকাতে
লুটে নেবে,
ভাঙা খাঁচায়
বনের পাখি
কেন ধরা দেবে?
মহারাজ, তুমি
যাও, যাকে সোহাগ
দিয়েছ তার
সাধ মেটাও
গে, ছাই সাধে
আমার কাজ নেই।
রাজা বললেন—
না রানী, তা
হবে না, লোকে
শুনলে নিন্দে
করবে। বল তোমার
কি সাধ? রানী
বললেন— কোন
লাজে গহনার
কথা মুখে আনব?
মহারাজ আমার
জন্য পোড়ামুখ
একটা বাঁদর
এনো।
Our
other eBooks |
|
|